নীলিমারা যে বাড়িতে থাকে তার পাশের একটা দোতালা বিল্ডিং আছে। বেশ কবছর ধরেই ও-ই দোতালা বিল্ডিং টা ফাকা পড়ে আছে। নীলিমা শুনেছে বাড়িওয়ালারা আমেরিকা থাকে। কী জানি একটা ভৌতিক কারণে সে বাড়ি আর ভাড়া হয় না। কয়েকবার যদিও ভাড়া হয়েছে। কী জানি এক বিচিত্র শব্দের কারণে সে বাড়িতে কোন ভাড়াটিয়া থাকতে পারে না।
নীলিমা ওর হাসবেন্ডের সাথে এই এলাকায় এসেছে ৪-৫ মাস হলো। বেশ কয়েক মাস ধরেই সন্ধ্যের পর থেকে ও-ই দোতালা বিল্ডিং থেকে কারা যেন চিৎকার করে বলতে থাকে, ” এগারো এগারো এগারো এগারো এগারো এগারো ” যেন অনেকটা জিকিরের মতো শোনা যায়। নীলিমা বরাবরই সাহসী মেয়ে।
সে একবার ভেবেই বসলো পাশের বিল্ডিং টাতে এবার যেতেই হয়। যে-ই ভাবা সেই কাজ। সন্ধ্যের পর নীলিমা পা বাড়ালো দোতলার বিল্ডিং টার দিকে। সিড়ি বেয়ে উপরে যেতেই এক ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেলো। কী এক অজানা ভয়ে নীলিমার হাত,পা বরফ হয়ে গেল। দরজা মেলে ঢুকতেই নীলিমা প্রচন্ড চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হাড়ালো। আশেপাশের মানুষ জড়ো হয়ে গেল। নীলিমাকে প্রতিবেশিরা বাসায় পৌছে দিয়ে যে যার বাড়ি চলে গেল। অফিস থেকে ফেরার পথে নীলিমার হাসবেন্ড তুহিন ডাক্তার কে নিয়ে আসলো।
পরীক্ষা নীরিক্ষা শেষে ডাক্তার জানালো, ভয় পেয়েছে,এছাড়া প্রেসার টাও লো। কয়েকদিন রেস্ট নিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। সেদিন রাতে আর পাশের দোতালা বিল্ডিং থেকে নীলিমা আর তুহিন কোন শব্দ শুনতে পেল না। নীলিমা কেমন চুপ হয়ে আছে।আসলে কি যে হয়েছে তুহিন জানতে চাইলেই নীলিমা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে।
পরেরদিন সকালে তুহিন সকালে উঠে দেখছে নীলিমা ঘুমোচ্ছে। সব কাজ সেরে তুহিন নীলিমাকে ডাক দিতে গিয়ে বুঝতে পারলো,নীলিমা আর বেচে নেই।
সেদিন সকাল পেড়িয়ে সন্ধ্যে হওয়ার পর আবার তুহিন শুনতে পেল, তারা বলছে,না ঠিক বলছে না, জিকির করছে, “তেরো,তেরো,তেরো,তেরো,তেরো,তেরো ”
ইশ! তুহিন যদি বুঝতে পারতো! নীলিমা তো চেয়েছিল তুহিন কে জানাবে যে,তুহিন বাবা হতে যাচ্ছে! কিন্তু নীলিমার মুখে সে কথা আর শুনা হলো না। নীলিমা হয়তো ভেবেছিল তুহিন কে অবাক করে দিয়ে সুখবর টা জানাবে! কিন্তু সে আর হলো কই!!!