রাবেয়া খালা সিঁড়ি থেকে নামছিলাম ও আমাদের বাড়িটা দোতালা বাড়ি যাকে বলে ডুপ্লেক্স। ওসময় যাদের এরকম দোতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি ছিল তারা পাড়ার মধ্যে সবচেয়ে বড়লোক। আমার বাবাকে ও পাড়ার দশজনের মান্যিগন্যি করত। রাবেয়া খালার যাওয়ার পথে অনিলের সাথে তার দেখা হল। অনিল হল ওদের বাড়ির মালি।ওদের বাড়িতে বিশাল বড় আর বাগান আছে সেখানেই কাজ করে। রাবেয়া খালা বলল” কি গো অনিল বাবু কই যাও”। “খালা লতা বুবুর কাছে কদম কয়টা দিতে যাই “অনিল বলল। ল তাদের বাগানে অনেক বড় একটা পুরনো কদম ফুলের গাছ আছে। সেই গাছটি ওর দাদা লাগিয়েছিল.। লতার কদমফুল বড়ই পছন্দের। রাবেয়া খালা বলল” যাও উপরে আছে”।
অনিল ঘরে ঢুকতেই দেখল লতা তার জানালা থেকে কি যেন দেখছে। লতার জ্বালা থেকেও দেশে কদম গাছটায় একদম সাজগোজ আসলে দেখা যায়। লতার জানালা থেকে বাইরের কদম গাছটায় একদম সোজাসুজি দেখা যায়। অনিল এসে দুইবার ডাক দিল কিন্তু তার কোন হুশ নেই।তিনবারের বার অনিলের দিকে তাকালো।অনিল মালি হলেও লতা তাকে ছোট ভাইয়ের মত ভালবাসে।লতা হুসে ফিরে এসে অনিল কে বলল” কিরে ভিতর আয়”।
অনিল এসে বলল “কী দেখতেছিলা ওমন কইরা কদম গাছের দিকে”? লতা হেসে বললো” ও কিছুনা, কি এনেছিস্ দেখি?”ও কদমফুল দে তো দেখি কতগুলো। “সবই তোমার জন্য এনেছি, তুমিতো আর ঘর থেকে বের হও না, কদমতলায় কতগুলো কদমফুলের পরেছিল তাই বললাম তোমার জন্য নিয়ে যাই।”লতা একটু হেসে ওকে জড়িয়ে ধরল।
পরের দিন সকাল বেলা, লতার মা আর রাবেয়া খালা রান্নাঘরে রান্না করছিল। হঠাৎ করে রাবেয়া খালা জিজ্ঞেস করল” নিশি মা কেমন আছে আফা”?
“আল্লাহর রহমতে খুব ভাল ঘরে বিয়ে হয়েছে, এখন অনেক শান্তিতে আছে আল্লাহ ওকে আরো সূখ শান্তি দিক। ” ভাল থাকলেই ভাল আমাগো হাসিখুশি লতাটা ওই ঘটনার পর কেমন যানি চুপচাপ হইয়া গেল।লতার কথা শুনে এলো তার মায়ের মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেল।
উপরের একদম কোনায় ঘরটায় লতার। উপরের মাঝের ঘরটা লতার বোনের ছিল। লতার বোন লতার থেকে দুই বছরের ছোট ওর বিয়ে হয়ে গেছে এখন ওই ঘরটা ফাঁকা পড়ে থাকে।উপরের তলায় এখন লতা একাই থাকে ওর মায়ের হাঁটুর ব্যথার জন্য ওর মা-বাবা নিচের ঘরেই থাকি।লতা ওর ঘর থেকে বের হয় না সারাদিন একাই ঘরের মধ্যে বসে থাকে কারো সাথে তেমন কথা বলে না।
পরের দিন ফজরের সময় ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিল। লতার জানালার সামনে এক যুবক এসে দাঁড়ালো। লতা বলল “কে আপনি? এখান থেকে যান। “ছেলেটি বলল” ভাল করে তাকিয়ে দেখতো চিনতে পারো কিনা”? লতা চমকে উঠে বললো আপনি? আপনি কি করে এলেন? আপনিতো ২ বছর আগে বলেই চুপ হয়ে গেল লতা।লতা বলল কেন করেছিলেন সে দিনে এমনটা আমার সঙ্গে, আমি আপনার কি ক্ষতি করে ছিলাম। বিয়ের দিন আমাকে ওভাবে না ঠকালে ও পারতেন।
ছেলেটি বলল “লতা সময় আমাকে এই ধরনের একটা পরিস্থিতে ফেলতে বাধ্য করেছে। “কি এমন হয়েছিল আপনার যে আপনি আত্মহত্যা করতে গেলেন? লতা আমি নতুন চাকরি পেয়েছিলাম চাকরি পাওয়ার পরপরই মা-বাবা আমার বিয়েও ঠিক করে ফেলেছিল সবকিছু ভালই ছিল, কিন্তু নতুন অফিসে আমার এক কলিগ আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিল। বলল আমার সাথে নাকি অফিসের এক মেয়ে কলিগের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে।ওরা বলল হয় আমি যাতে অফিস থেকে চলে যাই না হলে আমাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেবে। আমি মাথা নিচু করে অফিস থেকে বেরিয়ে চলে আসলাম বড়িশাল।
মা-বাবাকে লজ্জায় কিছু জানাতে পারিনি আমি। পরিবারের একমাত্র ছেলে ছিলাম আমাকে নিয়ে তাদের খুব আশা ছিল। এক মুহূর্তের জন্য আমার মাথায় সমস্ত আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিল আমি নিতে পারি নিয়ে এই চাপ।লতা সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে বলে উঠলো তাই এভাবে আমাকে ঠকালে।বিয়ের বেনারসি পড়ে আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
আমার ছোট বোনের ও বিয়ে হয়ে গিয়েছে। পরিবারের কাছে ছোট হয়ে সমাজের মানুষগুলো কাছে ছোট হয়ে আজ আমিও চুপ হয়ে গিয়েছি। কেন আমাদের সাথেই এমনটা হল মাসুদ। আজ তুমি আত্মহত্যা করেছে আর আমি বেঁচেও মরে আছি। তোমার মা সেদিন আমাকে কলঙ্কিনী বলেছিল আমার জন্য নাকি তুমি মরে গেছো। মাসুদ বলল-সবই আমাদের ভাগ্য। তবে আমি এখন চাই তুমি তোমার জীবনটাকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে নাও নাহলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা। লতা কাঁপতে লাগল চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।
তখনই রাবেয়া খালা লতা কে ধাক্কা দিয়ে বললো কি রে মাইয়া এই সমেয় এইখানে দাঁড়াইয়া আাছিস কেন।লতা যেন নিজের হুঁশে ফিরে এলো, লতা নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিল না লতা মনে মনে বলল “তাহলে কি সবই আমার কল্পনা। ”
একটু পরেই ফজরের নামাজ শেষ হলো তার বাবা নিজের ঘরের সোফায় বসে ছিল। এ সময় রাবেয়া খালা তাকে এক কাপ চা দেয়। কিন্তু আজব ব্যাপার হল সেদিনকে চা টা অন্য একজন এনেছিল।সে হল লতা।লতার মা, রাবেয়া খালা আর লতার বাবা লতা দেখে একেবারে চমকে গেল।
এরপরে লতা একেবারে বদলে গেল সে এখন নিজের জীবনকে আরেকটি সুযোগ দিতে চায়। তার চোখে মুখে এখন অনেক স্বপ্ন সে যেন তার নতুন জীবনকে নতুন করে সাজাতে চায়।
তবে কি সেদিন মাসুদ এসেছিল। সেকি মাসুদ কে দেখতে পেত সেই কদম গাছের নিচে সে কি উপলব্ধি করতে পারত যে মাসুদ তার আশেপাশেই আছে। নাকি সবই ছিল তার চোখের ভুল আর মনের কল্পনা।