সে-ই ২২ বছর আগের কথা। দিনটির কথা মনে পড়লে শওকত সাহেব এখনও আতন্কিত বোধ করেন। যা করেছেন তা কখনোই ঠিক ছিল না। কী আর করা যেতো! প্রচন্ড জেদে যা করেছেন তা এখন আর ভেবে লাভ কি! যাক্ গে।আজ আর সেসব ভেবে লাভ নেই।
আজ একটা খুশির দিন।শওকত সাহেবের মনে আনন্দ আর ধরছে না!
একমাত্র মেয়ের নাকি একটা ফুটফুটে বাচ্চা হয়েছে। শুনেছি মেয়ে হয়েছে। নাতি কে কোলে নিতে হলে এখুনি বেড়িয়ে যেতে হবে। কাছেই হসপিটাল।মা মরা মেয়ের বাবা ছাড়া আর তো কেউ নেই!!
শওকত সাহেব মেয়ের পছন্দের মিষ্টি কিনেছে। জলদি করে রিকশা নিয়ে হসপিটালের কেবিনে গেল শওকত সাহেব। একেবারে আত্বীয় স্বজন মিলে কেবিন একদম গমগম করছে।
ও-ই তো।পাশেই বাচ্চা টা শুয়ে আছে,দূর থেকেই শওকত সাহেব দেখছে। বাহ! কী মিষ্টি চেহারা হয়েছে মেয়েটার।
কাছে গিয়ে কোলে নিতে গিয়েই শওকত সাহেবের মাথা টা চক্কর দিয়ে উঠলো।
সপ্ন দেখছি না তো। এ-ই তো হুবাহু চোখ,নাক, হাসি।কিন্তু ২২ বছর আগের যে বাচ্চাটা কে শওকত সাহেব নিজ হাতে গলা টিপে মেরে ফেলেছিল সেই বাচ্চাটার সাথে নাতনীর এতটা মিল কী করে হলো!
সেই বাচ্চা টা তো আর শওকত সাহেবের আপন কেউ না!! স্ত্রীর অপকর্মের ফল কে কেনই বা সে বাচিয়ে রাখতো! কিন্তু এ কী! কেন এত হাত পা কাপছে শওকত সাহেবের!মাথা টা ঘুরছে!! সব যেন অন্ধকার হয়ে আসছে। চারিদিকে এত উচ্ছ্বাস! বাচ্চাটা এত হাসছে কেন!
“না আর পারছি না। পারছি না আমি!বাচাও!! আমাকে কেউ বাচাও! আমি মরে যাচ্ছি! বাচাও আমাকে”কেন!!! সেদিন তো আমাকে বাচালে না! এত কায়দা করে আমায় নিয়ে গেলে ছাদের কার্নিশে। বলেছিলে আমাকে ভালোবাসো! ভালোবাসলে কী করে পারলে বলো? ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে?! ”
নিজের স্ত্রীর মুখে এই কথা গুলো যেন শওকত সাহেব ক্রমাগত শুনে যাচ্ছে। প্রচন্ড জেদ আর ঘৃণায় নিজের স্ত্রী কে মেরে ফেলতেও সেদিন এতটুকু হাত কাপে নি শওকত সাহেবের। শুধু মাত্র নিজের রক্ত আছে বলেই হয়তো নিজের মেয়েকে আর মেরে ফেলতে পারেন নি শওকত সাহেব। শওকত সাহেব বুঝতে পারছে সময় ঘনিয়ে আসছে। পাপ কি আর কেউ কে ছেড়ে দেয়?!