প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রাচীনতা ফিরে আসা একান্তই আবশ্যক। বাবার পকেট থেকে পাওয়া দু টাকার নোট শৈশবে যে আনন্দের সঞ্চার করতো, আজকের শৈশব যেন তার বিপরীত কথা বলে। এ যেন অনলাইন,টেলিভিশন এবং বিভিন্ন ধরনের গেমস খেলাতে আবদ্ধ এক তথাকথিত আধুনিক শৈশব । মাছ ধরতে নেমে নিজেই কাদামাটিতে ডুবে যাওয়ার পর,ঘরে ফিরে মায়ের হাতের কেলানি, বকুনি আজ হারাতে বসেছে।
গরমের দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে মায়ের সাথে ঘুমাতে যাওয়া – অতঃপর চোখ বন্ধ করে মায়ের ঘুমিয়ে পড়ার জন্য অপেক্ষা করা, মা ঘুমাতে না ঘুমাতেই মাকে রেখে খেলতে চলে যাওয়া। সেসব যেন সোনার হরিণ। আধুনিক শৈশব পায়ে মাটির আচড় লাগাতে জানে না। সে কৃষকের বংশোদ্ভূত হয়েও পাট গাছ চেনে না। গুলতি নিয়ে বনেবাদাড়ে
পাখির খোঁজে ঘুরে বেড়ানো , সন্ধ্যা হলেই ঘরের পেছনে দাঁড়িয়ে থেকে মায়ের হাবভাব বুঝতে চেষ্টা করা।
“ঘরে চলে আয় কিচ্ছু বলবো না” এই বাণী গুলো আজ বিলুপ্তপ্রায়। ভোর বেলাতে ঠাকুর বাড়ির বকুল তলে বকুল কুড়াতে যাওয়া,হেনালি পাতার বাঁশি,আম পাতা দিয়ে গাড়ি এগুলোর জায়গা জুড়ে আছে কম্পিউটার গেমস। বর্ষা এলেই স্কুল পালিয়ে বিলে গিয়ে শাপলা, শালুক তোলা খালে গিয়ে গোসল,গাছ থেকে লাফিয়ে পড়া, মাষ্টার সাহেব এসব দেখে পরের দিন
ক্লাসে শাস্তি দেওয়া।
ছুটির দিনে নানুর বাড়ি যাওয়া,এখনো যে ভেসে ওঠে মনে সেই পুরানো বাড়ি, চারদিকে সুপারি গাছের বন।বাড়ির পিছনে শিমুল ফুল নিয়ে কাড়াকাড়ি। জানি আমি সেই সময়টাতে আর ফিরে যেতে পারব না তবে আমার কল্পনায় সেই সুখকর স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা ভেবে নিজেকে সেই সুখকর অনুভূতি অনূভব করানো কঠিন কিছু নয়।
তবে তা দিয়ে মনের পরিপূর্ণ পিপাসা নিবারন সম্ভব নয়। তাইতো এ তৃষ্ণার্ত মনের একমাত্র চাওয়া,”ফিরিয়ে দাও আমার সোনালি শৈশব ফিরিয়ে দাও সে প্রাচীনতা।”