মাতালি নগরপুর গ্রামের এক বিধবা মেয়ে। বিয়ে হয়েছে মাত্র দুই মাস হল। তার মধ্যেই স্বামী শ্রীচরণ জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। কবিরাজমশাই বলেছিল ডায়রিয়ার মরেছে সে। স্বামীর মৃত্যুর পর সকলে মাতালিকপই ঘাড়ে দোষ দিয়েছিল মাতালির শ্বশুর বাড়ি থেকে চলে আসতে বাধ্য করা হয়েছিল।
বাপের বাড়ি শ্বশুরবাড়ি কোথাও ঠাঁই না পেয়ে গ্রামের এক ছোট্ট চিলেকোঠায় পড়ে থাকে মাতালি। সেই ছোট্ট জীর্ণ-শীর্ণ চিলেকোঠা টাও ছিল গ্রামের পাগল নয়নের, নয়ন এর মৃত্যুর পর সেইখানে ওটাই হয়। মাতালির বাপের বাড়ি এমনিতেই দিন আনে দিন খায় তার উপর আবার সৎমা। তাই বাপের বাড়ি আর বাপের বাড়ি নয়।
গ্রামের সব লোকেরা তাকে কলঙ্কিনী বলে। মাতালির জন্মের সময় নাকি তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে, তার বাবার রোজগারের পথ টাও নাকি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে তার বাবা অবশ্য একটা বিয়ে করে আনে। এখন আবার মাতালির স্বামী ও গত হয়েছে।গ্রামের লোকেরা তো তার নামটাই ভুলতে বসেছে তাকে এখন সবাই অপয়া, অলক্ষী, কলঙ্কিনী বলেই ডাকে।
ঠিকমতো খেতেও পারে না সে এত বড় পৃথিবীর বুকে এখন সে একা।তবে এত তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের মধ্যে পাশের বাড়ির ছোটনের সাথে তার একটু ভাব আছে। ছোটন বয়সে তার ছোট ভাইয়ের মতন, ছোটন তাকে অভাগী বলে ডাকে।মাঝে মাঝে ছোটন তার মায়ের কাছ থেকে খাবার চুরি করে এনে অভাগী দিদি কে দেয়। ছোটনের আবার তাকে দেখে খুব মায়া হয়। এ দিক সে দিক করে ভিক্ষা দিক্ষা করে তার একটু খাবার জুটে।
ভিক্ষা করলে তাতেও দোষ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে একটু কাজের সন্ধান করে তাও কেউ কাজ দেয় না। সেদিন গ্রামের মোড়ল মশাই এর বাড়ী গিয়েছিল। একটু যাতে কাজ খুঁজে দেয় মোড়ল মশাই ঘাড় ধরে বের করে দিয়েছে।
সেদিন গ্রামে খুব ঝড়। ভয়ঙ্কর ঝড়ে সব গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়ে যাচ্ছি। গাছপালা ভেঙে পড়ছে ঘরের চালের উপরে।মাতালি তার ভাঙ্গা চালের ঘরে শুয়েছিলে। হঠাৎ করেই তার ঘরের পাশে থাকা বড় গাছটা তার ঘরের উপর ভেঙ্গে পরল।মাতালি বলল “মা ও মা আমি তোমার কাছে আইতাছি “।শেষমেষ মাতালি র তার মায়ের কাছে জায়গা হল।
সেদিন ঝড়ের সময় প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আশ্রয় চেয়েছিল মাতালি , কিন্তু সবাই তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আজ এখনো প্রত্যেক গ্রামে মাতালির মত বৈষম্যতার শিকার নারী হয়েছে। তাদের শেষ পরিণতিও হয়তো মাতালির মত। কেন এত বৈষম্য, কেন? মাতালি কি মানুষ ছিল না। তার সাথে যা হয়েছে তার জন্য কি সে দায়ি? নাকি তার এই গৃন্য সমাজ।
মানুষ মানুষের জন্য,জীবন জীবনের জন্য
একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না।