29 C
Dhaka
Saturday, September 30, 2023
spot_img

সখা ভালোবাসা কারে কয়।

ঠিক এই মূহুর্তে আমি আমার সামনে যাকে দেখছি এই মেয়েটার ছবি আমাকে রুহান দেখিয়েছিল আরো বছর চারেক আগে। রুহান তো বলেছিল যে, অদিতি মারা গেছে অনেক বছর হলো। রুহান প্রচন্ড ভালোবাসতো অদিতি তে। অদিতি ছাড়া সে কোন কিছুই বুঝতো না।আমার সাথে রুহানের বিয়ে হয়েছে প্রায় ৫ বছর হলো। রুহান ও আমাকে অনেক ভালোবাসে তা আমি জানি। তবে এক পড়ন্ত বিকেলে রুহান বলেছিল যদি অদিতি বেচে থাকতো সে কখনোই আমাকে বিয়ে করতো না। জানি না কেন!সেদিন ওর এই কথাটা বুকে তীরের মতো বেধেছিল। আজও সে কথা ভাবলে আমার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
মেয়েটা কারো জন্য অপেক্ষা করছে। বসে আছে পার্কের কোণার এক সিটে। আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম।

“হ্যালো”
“হাই। আপু, আমি ঠিক আপনাকে চিনতে পারছি না”
“হ্যা আসলে আমিও আপনাকে চিনি না।তবে আপনি দেখতে খুব মিষ্টি। আমার পরিচিত একজনের মতো দেখতে আপনি”
“ওহ্ আচ্ছা। তা-ই বলুন।” মেয়েটি হেসে উত্তর দিল।
“আমি সোহানা! আপনি?”
“আমি রিতু। এবার এইচ.এস.সি দিবো!”
“আচ্ছা আচ্ছা! বেশ ভালো।তুমি আমার ছোট ই হবে। তোমাকে তুমি করেই বলছি।রাগ করছো না তো? ”
“না আপু। রাগ করবো কেন!”
“কারো জন্য অপেক্ষা করছো বুঝি?”
“না আসলে একটা ফ্রেন্ড এর আসার কথা নোট নিয়ে।”
“উম্ম! বয়ফ্রেন্ড? ”
” না না আপু।সেরকম কিছু না। ”
“আচ্ছা বুঝলাম। রিতু, শুনো ! তোমার মোবাইল নম্বরটা দেয়া যাবে? তোমার সাথে আড্ডা দিতে বেশ লাগছে।সময় করে একদিন না হয় আমার বাসায় এসো।খুব আড্ডা দেওয়া যাবে। ”
“নিশ্চয়ই আপু। ”

রিতুর থেকে নম্বর নিয়ে উঠে পড়লাম।বুকের ভিতর টা কেমন যেন ফাকা ফাকা লাগছে! বাসায় যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। রুহান আজ জলদিই এসেছে অফিস থেকে।শুয়ে আছে অবেলায়।
“কী ব্যাপার? মিস্টার? আজ এত জলদি? হুম? ”
“উহু।অফিসে কাজের প্রেসার একটু কম ছিল।মাথা টাও ধরেছে তা-ই চলে আসলাম।এসে দেখি মহারাণী বেড়িয়েছে। আর কি করা! শুয়েই আছি বিকাল থেকে! ”
” তো ফোন করলেই পারতে! কিছু খেয়েছো? ”
“নাহ্!ভালো লাগছে না একটু চা করো না!”
” হ্যা আনছি।”
দুজন চা নিয়ে বেলকনি তে বসলাম।
“রুহান?”
“হুম বলো।”
” অদিতি ফিরে আসলে ওকে বিয়ে করবে তুমি? ”
” হঠাৎ এই প্রশ্ন! ”
” বলো না গো! ”
“নাহ্, করবো না! এত সুন্দরী বউকে রেখে অন্য কেউ কে বিয়ে করা যায় নাকি হুম?”
” ইশ! মিথ্যা! তোমার অদিতি তো আমার থেকেও অনেক সুন্দরী! ”
“হা হা। সোহানা! আমি কখনো অদিতি আর তোমার মধ্যে তুলনা করি নি।যাকে ভালোবাসি তার সাথে আরেক জনের তুলনা করা যায় না! বুঝলে? ”
“হুম! ”

আজ শুক্রবার। বেশ বেলা করেই দুজন উঠি এই দিনটা তে। টোনাটুনির সংসার। তেমন চাপ নেই। তবে আমি বেশ সকালেই উঠেছি।
“হ্যালো? রিতু? ”
“কে বলছেন?
“আমি সোহানা।”
“ওহ্ হ্যা আপু। বলুন। ”
” রিতু! ফ্রী আছো আজ?দুপুরে না হয় আসো আমার বাসায়! দুজন জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে! ”
” আচ্ছা আপু! আসবো! ”
“ঠিকানা টা লিখে নাও না হয়। সমস্যা হলে ফোন দিও।”
“ঠিকাছে আপু!’

রিতু আসবে বলে সকাল থেকেই কাজে লেগে গেলাম। ভালো মন্দ কিছু রান্না করা লাগবে। বুয়া আসতে বেশ কিছু সময় বাকি আছে। ফ্রিজ থেকে মাছ মাংস বের করে ভিজিয়ে রাখছি।
” এই সোহানা! ”
” ওহ! রুহান! উঠে গেছ! তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো।নাস্তা দিচ্ছি! ”
” হুম তা আসছি।কিন্তু কেউ কি আজ আসবে? সকাল সকাল এত কাজ করছো! ”
” হ্যা আসলে তোমাকে বলা হয় নি! আমার এক ছোট্ট বান্ধুবি আসবে। ‘
” আচ্ছা আগে বলো নি তো।”
” না আসলে কিছুদিনের পরিচয়।তোমাকে সেভাবে বলা হয় নি।তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।সে আসলেই তো দেখতে পাবে।”

রিতুর আসার সময় হয়েছে। একটু পরই চলে আসবে। আমি রান্নাঘরে কাজে ব্যস্ত।
কলিং বেল বাজছে। ও বোধহয় চলে এসেছে।
“রুহান! দরজাটা খোল তো। আমার হাতে মসলা মাখানো। ”

“খুলছি!!!” দূর থেকে শুনলাম রুহান বলছে।

“কেমন আছো রিতু? ”
“এইতো ভালো! আপনি ভালো আছেন আপু? ”
“বেশ আছি।তুমি একটু বোস।আমি আসছি! ”

আমি বেড রুমে এলাম।রুহান বসে আছে চুপ করে। আমি রুহানের দিকে তাকিয়ে হাসলাম!
“সোহানা! এই তোমার ছোট বান্ধুবি? ”
“হ্যা। বেশ মিষ্টি দেখতে তাই না বলো? ”
“হুম। সেটাই। ”
“তুমি বোস। আমি একটু মেয়েটাকে সময় দেই! ”
রীতুর সাথে গল্প করতে করতে দুপুর হয়ে গেলো।

আমি, রুহান, রিতু একসাথে খেতে বসেছি।রুহান একদম মন মরা হয়ে আছে। রিতুও বেশ চুপচাপ খাচ্ছে। ও যদিও খুব শান্ত মেয়ে। আমার মতো চঞ্চল না।
“রিতু। আরেকটু ভাত নাও না!”
“না আপু।আমি একটু কম ই খাই!”

যা টুকটাক কথা বলার আমিই বলছি।

খাওয়া শেষে রুহান সোজা বেড রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।ওর নাকি মাথা ধরেছে। আমি আর রিতু গল্প করছি। রিতু পরিবারের ছোট মেয়ে। ওর বড় বোন অনেক আগে ব্লাড ক্যান্সারে মারা গেছে। বাবা মার আদরের মেয়ে। তবে মেয়েটা খুব ভালো।খুব মিষ্টি মেয়ে! অনেকক্ষণ গল্প শেষে রিতু বাসায় ফিরে যেতে চাইলো!

বললো, আবার আসবে।ঠিক যাওয়ার সময় রিতু বললো, “জানেন আপু।আপনি খুব মিষ্টি। আর অসম্ভব ভালো মেয়ে।রুহান ভাইয়া খুব লাকী।এরকম মেয়ে আজকাল মেলে না।আপু, আজ যাই। আবার দেখা হবে! ” কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মেয়েটা চলে গেল।শেষের কথা গুলো খুব কানে বাজছে।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়েছে। বেলকনিকে একা দাঁড়িয়ে আছি। রুহান কখন এসে পাশে দাঁড়িয়ে আছে খেয়াল করি নি!

“জানো সোহানা। অদিতি যখন মারা যায় তখন আমি খুব একা হয়ে পড়ি।অদিতির পরিবার বড় মেয়েকে হাড়িয়ে তখন পাগল প্রায়। আমাকে তারা খুব ভালো জানতো।খুব ভালোও বাসতো। ঠিক তার কিছুদিন পর মাস্টার্স এর ক্লাসে তোমার সাথে আমার পরিচয়। তুমি একটু একটু করে আমার আপন হয়ে গেলে। তোমার মতো করে আমাকে কেউ কখনো ভালোবাসে নি। আমাদের বিয়ের কিছুমাস আগে অদিতির বাবা আমাকে একদিন ডেকে পাঠায়। সহসা অদিতির ছোট বোনকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব দিয়ে বসে। মেয়েটা ছোট। আর অবিকল অদিতির মতো দেখতে। সত্যি বলতে আমি তখন চাইলেই বিয়ে টা করে নিতে পারতাম। কিন্তু সোহানা। তখন আমার পক্ষে এটা সম্ভব ছিল না।হ্যা আমি অদিতিকে ভালোবাসতাম। ওর বোনকে নয়।আমি তোমাকে ভালোবাসতাম।তোমার সাথে সংসার করার সপ্ন দেখতাম। আমি সেদিন সেই প্রস্তাবে রাজি হই নি।এমন কি তাদের সাথে আর কোন যোগাযোগ রাখিনি। আজ এত দিন পর তুমি ইচ্ছে করেই যে রিতুকে এখানে আসতে বলেছো তা আমি ঠিক বুঝেছি ”
” তার মানে রিতুই অদিতির…………”

” হ্যা অদিতির বোন।রিতু কেন! অদিতি ফিরে এলেও কখনো আমি আমার সোহানাকে ফেলে যেতাম না কোথাও!”
“তাহলে যে বলেছিলে,অদিতি ফিরে এসে ওকে তুমি…..! ”
“তুমি বডড বোকা মেয়ে। বউকে রাগানোর জন্য একটু আধটু মিথ্যে বললেই তা সত্যি হয়ে যায় বুঝি!!! হুম? ”
” তুমি খুব খারাপ রুহান। খুব! ”
” হ্যা খুব খারাপ।”

রুহান টান দিয়ে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।আমি বুঝলাম আমার ভালোবাসা মিথ্যে নয়। এই যোগ্য ছেলেটাই আমার সবটা জুড়ে আছে। আর এই বোকা বোকা মেয়েটাকে রুহান বড্ড ভালোবাসে।

সাম্প্রতিক পোষ্ট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

23,000FansLike
0FollowersFollow
0FollowersFollow
0FollowersFollow
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe

জনপ্রিয় পোষ্ট