বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি। কোনরকমে পাড়ার মোড়ে মুদির দোকানের সামনে ঠেসাঠেসি করে দাঁড়িয়ে আছি। কী জ্বালায় পড়লাম রে বাবা! এই সাত সকালে এত বৃষ্টি হবে কে জানতো! বাসায় কি আজ যাবো না! প্রচন্ড বিরক্তিতে পাশে তাকাতেই মনে হলো যে ছেলে টাকে পাশে দেখছি তাকে এর আগেও কোথাও দেখেছি। নাহ! ঠিক মনে পড়ছে না। ছেলে টা ভিজে একাকার।ছেলেটার বয়স আন্দাজ করার চেষ্টা করছি। কত আর হবে! বড়জোর ১৫/১৬! কোনরকমে দাড়িয়ে আছে। কেমন যেন অসুস্থ মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না,এখুনি হয়তো পড়ে যাবে।! কেমন যেন পুরো ঘটনা টাই মনে হচ্ছে এর আগে আমার সাথে হয়েছে!! আমি যেন আন্দাজ করতে পারছি যে এরপর কী হতে যাচ্ছে।আমার কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে। কাল ও তো ছেলেটার মা ওকে খুব বকছিল কলেজ থেকে ফেরার পথে ডিম আনতে ভুলে গেছে বলে।ছেলেটা বড্ড চুপচাপ। কোন কথা বলে নি। ছেলেটার নাম যেন কী! হ্যাঁ অতনু! কিন্তু আমি তো ছেলেটাকে চিনিও না! কীভাবে যেন সব জেনে যাচ্ছি। মাথা টা আমার ঝিমঝিম করছে। পাশে তাকাতেই দেখি ছেলে টা নেই! কই গেলো! আমি জানি আমি এখুনি মাথা ঘুরে পড়ে যাবো।কিন্তু কেন!এরপর আর কিছু মনে করতে পারি নি। জ্ঞান ফিরে দেখি বিছানায় শুয়ে আছি। পাশের চেয়ারে মা বসে আছে!
-কী রে মা! এখন কেমন লাগছে তোর?
-মাথা টা খুব ঘুরাচ্ছে মা!
-তা ঘুরবে না? ডিম, দুধ তো আর খাবি না। পাড়ার লোকরা বলে বেড়ায় তো! একমাত্র মেয়ে কে আমি নাকি যত্ন করি না!
-মা! প্লিজ থামো না! পাড়ার লোক বললেই হলো নাকি! তুমি আর এই বয়সে কত আর খেয়াল রাখবে!!
আচ্ছা মা! আমাকে বাসায় কে নিয়ে এলো? (আমার মন বলছে কেন যেন ও-ই ছেলেটাই আমাকে বাসায় পৌছে দিয়েছে!)
-ঠিক জানি না রে। তাড়াহুড়োয় ছেলেটার নাম ও জিজ্ঞেস করি নি! তোকে অমন জ্ঞান হাড়ানো অবস্থায় দেখে আর কি কোন হুশ ছিল! বল তো!কতবার বলি যে একটু নিজের যত্ন কর! বয়স কি আর কম হয়েছে তোর!
-এই মা! শুনো না! ছেলে টার বয়স কেমন হবে?
-১৪-১৫ হবে বোধহয়। বাচ্চা ছেলে!
হুম!
আমি ঠিক বুঝতে পারছি আমার সাথে যা ঘটছে তার সাথে আমার কোন পূর্ব পরিচয় আছে! কিন্তু কিছুতেই না এর শুরুটা ধরতে পারছি না! আমার কেমন যেন খুব অস্থির লাগছে। ঘুম ঘুম পাচ্ছে। কাল রাতেও ভালো ঘুম হয় নি!
বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই! মার ডাকেই ঘুম ভাঙ্গলো।
-আচ্ছা রে তনী। তুই কী আর বড় হবি না! হ্যা?
-উফ! মা,কী হয়েছে!
-এই যে নিজের ডায়েরি টা এখানে সেখানে রেখে দিস পরে আর খুজে না পেলে তো ঠিকই চিৎকার চেচামেচি করে বাড়ি মাথায় তুলবি। রেখেছিস তো ডাইনিং টেবিলে।জল পড়ে পাতা ভিজেও গেছে অনেক খানি।কী সব লিখেছিস দেখ! দরকারি কি না কে জানে!
-আচ্ছা আচ্ছা! হয়েছে মা।দাও আমাকে!
-হ্যা হ্যা নে! সারাদিন আঁকিবুঁকি করবি আর ঘুমোবি! আর কাজ কী তোর!
-আকিবুকি না মা! তুমি না এসব বুঝবে না!
পাতা মেলতেই তনী অবাক হলো! আজকের সকালে ঘ টে যাওয়া পুরো কাহিনী টাই এখানে লিখা! আর হাতের লিখা তো আমারই। আশ্চর্য তো! কিন্তু আমার তো কিছুই মনে পড়ছে না! কখন লিখলাম আমি এসব! নাহ! আর ভাবতে পারছি না আমি! গল্প লিখার অভ্যেস তো আমার ছোট বেলা থেকেই।কিন্তু এটা তো আমি লিখি নি! লিখলে কী আর মনে পড়তো না আমার! আমি বেশ কিছুক্ষণ লেখার দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ মনে হলো বেশ কিছু বানান ভুল। আর এছাড়া লেখাগুলো কেমন যেন বাকা করে লিখা। আমি তো বানান ভুল করি না সচরাচর। তাছাড়া এমন বাকা করেই বা কেন লিখেছি! নাহ! আমার মাথায় কিচ্ছু খেলছে না।কিছু মনেও পড়ছে না ছাই! ধ্যাত! প্রচন্ড রাগ লাগছে। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। একদম কিছু ভালো লাগছে না!মাথাটাও কী যে ব্যথা করছে! মাকে চা দিতে বলি যাই। একটু চা খেলে বোধহয় ভালো লাগবে!
-ও মা! একটু চা করে দাও না! খুব মাথা ধরেছে।
– হ্যা বোস।দিচ্ছি। টুল টা নিয়ে এদিকে বোস।
– হুম।
মা চায়ের পানি চুলোয় দিয়েছে।
– হ্যা রে তনী। তুই আজকাল ঘুমের ঘোরে অত রাতে কী লিখিস?
– মানে? কি বলছো এসব!
– হ্যা! কালই তো বই পড়তে পড়তে লাইট জালিয়েই ঘুমিয়ে পড়লি।আমি শেষ রাতে উঠে দেখি তোর রুমের লাইট জালানো।লাইট বন্ধ করতে গিয়েই তো দেখলাম চোখ মেলতে পারছিস না!অথচ ডায়েরি তে তাড়াহুড়ো করে কী সব লিখেই যাচ্ছিস! যে-ই থামাতে গেলাম একদম ঘুমে যেন ঢুলে পড়লি! কী যে করিস তুই! কে বলে তোকে অতরাতে ঘুম নষ্ট করে ওসব গল্প লিখতে!
– না মা আসলে এমনি।তুমি কি গল্প টা পড়েছিলে?
– আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তো আমার! বসে বসে তোর গল্প পড়তে বসি!
এই নে ধর। চা শেষ করে কাপ দিয়ে যাবি কিন্তু।
তার মানে আমি যা দেখেছি তা সপ্ন ছিল। কিন্তু সপ্ন দেখে তা আবার ঘুমের ঘোরে লিখা যায় না কি! নাহ! মাথাটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। চায়ের কাপ আর সাথে মোবাইল টা হাতে নিয়ে ছাদে উঠে গেলাম। ব্যাপার গুলো একটু ঠান্ডা মাথায় বিশ্লেষণ করতে হবে।বেশ কিছুক্ষণ গুগল ঘাটাঘাটি করে যা বুঝলাম আমি যা করছি তাকে বলে “Sleep working “!!! এই সময়ে অনেকেই অনেক জরুরি কিছু যেটা কি না তার অভ্যেস বা প্রতিদিনের কাজের মধ্যে পড়ে সেই কাজ গুলোই ঘুমের ঘোরে করে থাকে।
আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ব্যাপার গুলো আর মনে থাকে না। আমার কাছে ব্যাপার টা এখন পরিষ্কার কিন্তু সকালের ঘটনাটা হুবহু সপ্নের সাথে এতটা মিলে গেলো কী করে, তা আমার কাছ আজও অজানা। কিছু জিনিস না জানাই হয়তো ভালো। সৃষ্টিকর্তাও চায় না বোধ হয়! যেটা ছিল না জানা, সেটা অজানাই থাক! সব জেনে গেলে জীবনের মর্মই হয়তো জানা হতো না!